অধ্যায় ৪ – সমাধি
কিন্তু হায়!এই জয় আসে কঠিন মূল্যের বিনিময়ে। এই তাণ্ডবলীলায় পৃথিবীর সাধারণ (শুভ দলের) মানুষও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ন্যায়ের এই যুদ্ধে ঝরে যায় অসংখ্য সতেজ প্রাণ। অশুভ দলের পরাজয়ের পাশাপাশি গেরিলা যোদ্ধাদের অনেকী শহীদ হয় সত্যযোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধ করে, কেউ বা হয় কোল্যাটারেল ড্যামেজ, যা যুদ্ধের এক নির্মম বাস্তবতা!
রবিন নেমে আসে রাস্তায়। পৃথিবী যেন আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় এখানে সেখানে পরে আছে বীভৎস, পোড়া গন্ধ ওঠা, বিকৃত শরীরের সারিসারি লাশ। রবিন নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে ওঠে। রবিন বিহ্বল হয়ে ওঠে, যেন সে কোন এক পরাবাস্তব জগতে এসে পড়েছে। রবিন নিজেকে একটু সামলে নিয়ে দ্রুত আবার আজরার খোঁজে বেড়িয়ে পরে। ট্র্যাকার কাজ করছে না। কিন্তু ও জানে কোথায় আজরাকে পাওয়া যাবে। আজরাকে অভিনন্দন জানাবে ও এখন।
পথে আসতে আসতে রবিন দূরে কোথাও একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পায়। তীক্ষ্ণ সেই কান্নার শব্দ একটা অন্ধকার গলি থেকে ভেসে আসছে। রবিন সন্তর্পনে সেদিকে এগিয়ে যায়। খন্ডিত,ঝলসানো এক নারীদেহের পাশে ফুটফুটে একটা শিশু তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে দারুণ ভয় পেয়ে গেছে। রবিন মেয়েটিকে কোলে তুলে নেয়। একেরপর এক ভয়াবহ দৃশ্য পাড়ি দিয়ে রবিন শিশুটিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এসময় কাছেই কে যেন মৃদু স্বরে আকুতি করে উঠলঃ “পানি, পানি!”
রবিন মেয়েটিকে তার কোল থেকে নামিয়ে, এগিয়ে যায় একটা বিধ্বস্ত ঘরের দিকে। মৃতপ্রায়, রক্তাক্ত একজন পুরুষ কাতরাচ্ছে, বিল্ডিং-এর বীম ভেঙ্গে পড়ে তার শরীরটাকে থেঁতলে দিয়েছে। রবিন তার কাছে যেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতে হাত রাখল। মানুষটা রবিনের দিকে একপলক চাইলো, এরপরেই মাথাটা সামনে ঝুঁকে পড়ল। রবিন অন্ধকার থেকে ভয়ে কূঁকড়ে থাকা একটা বাচ্চা ছেলেকে টেনে বের করে নিয়ে আসে। ছেলেটি শকে কোন কথা বলতে পারছে না। রবিন ছেলেটিকে তার সাথে নেয়। তারা তিনজন পরের কয়েক ঘন্টা আরও অনেক পরাবাস্তবতার সাক্ষী হয়ে, হেঁটে সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী পাড়ি দিয়ে, শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় আজরার ডেরায়। রবিনের চোখ আজরাকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু এখানেও একই দৃশ্য, শুধুই লাশের ছড়াছড়ি। রবিনকে আসতে দেখে দূর থেকে একজন ছুটে আসে। রবিন তাকে চিনতে পারে। সে আজরার দলেরই একজন ডেপুটি। ছেলেটি রবিনের কাছে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পরে, আর বলতে থাকে, “কমান্ডার আর আমাদের মাঝে নেই! চেকপোস্টের মিশন সফলভাবে শেষ করে আমরা ফিরে আসছিলাম। তোমাকে মেইন-গেটের ওপারে ঠিকঠাক ঢুকে যেতে দেখে আর লড়াইয়ে জয়লাভের পর আমরা সবাই এত ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম!কিন্তু তারপরই হঠাৎ ওরা আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে, নিশ্চয়ই হাই-টেক কোন সারভেইল্যান্স ড্রোনে আমাদের ট্র্যাক করছিল। শেষ পর্যন্ত আমাদের আস্তানা ওরা খুঁজে পেয়ে যায়। শুরু হয় আরেক সম্মুখ যুদ্ধ!
আমরাও পাল্টা আক্রমণ করি, কিন্তু তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছিলাম না আমরা। সৈন্যসংখ্যাও বেশি ছিল তাদের। শেষ অব্দি আর উপায় না দেখে কমান্ডার আমাদের প্রাণ বাঁচাতে কোনরকম কভার ছাড়াই একা ছুটে যান সামনে, আত্মঘাতী বোমা নিয়ে তাদের ট্যাংকের উপর যেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন! নিমিষেই সব শেষ…
ওরা এই যুদ্ধেও পরাস্ত হয়, আমরা হই বিজয়ী। কিন্তু কমান্ডার!!?” সে চোখের পানি মুছে বলে, “জয়ী আমরা আজ হলাম ঠিকই, কিন্তু হারালাম আমাদের পরম প্রিয়জন, আমাদের প্রাণপ্রিয় কমান্ডারকে!আর সেই সাথে অনেক কমরেডকে!”
রবিন কিছুতেই যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। না, এ কিছুতেই হতে পারেনা! সে মাটিতে বসে পড়ে! ডুকরে কেঁদে ওঠে। বাচ্চাদুটোও যেন কিছু বুঝে উঠতে পারেনা কি করবে। রবিনের গা ঘেঁষে দুজন জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা। এরই মধ্যে আজরার গেরিলা দলের আরও অনেকেই ওদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে। সবার চোখে নোনা জল। ওরা রবিন কে ধরে ওঠায়, নিয়ে যায় আজরার কাছে। কেউ একজন বলে ওঠে, “কমান্ডার শেষ অব্দি লড়ে গেছেন। তিনি প্রকৃত মহাবীর, তিনি শহীদ!” ওরা সবাই আজরার উদ্দেশ্য একটা স্যালুট দেয়।
ওই তো আজরা! রবিনের ছোট্টবেলার খেলার সাথী আজরা! ওর প্রাণের আজরা! সাদা কাপড়ে ঢাকা আজরার নিষ্প্রাণ দেহের খন্ডিত অংশগুলোর সামনে রবিন হাঁটু গেঁড়ে বসে, মুখ থেকে কাপড়টা সরায়। আজরার সুন্দর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে, একটা পাশ কেমন ঝলসে গেছে। কিন্তু, তবুও কি পরম প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে আছে যেন!রবিন আর সহ্য করতে পারেনা।
আজরার এই মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দোষী করে রবিন । আজরাকে নিয়ে ওরা সারিবেঁধে বেরিয়ে আসে খোলা আকাশের নীচে। ওপরে আকাশ মেঘে মেঘে ঢেকে যায়। শেষবারের মত আজরার কপালে চুমু খেয়ে চিরনিদ্রায় শুইয়ে দেয় মাটিতে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে শুরু করে, কোথা থেকে যেন বুনোফুলের তীব্র সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। বৃষ্টির ফোঁটা নেমে আসে ওর গাল বেয়ে নেমে আসা কান্নার জলের সাথে মিশে। রবিন ভেজা চোখে বৃষ্টিভেজা দু’হাত আকাশের পানে তুলে আজরার জন্য, আজরার নিজের অজান্তে কৃত সব পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করে। পৃথিবীকে শান্তি উপহার দিতে সৃষ্টিকর্তার ডাকে যারা আজ চলে গেছে তাদের সবার জন্য প্রার্থনা করে। ঝড়ো বাতাসের সাথে অঝোরে বৃষ্টি পরতে শুরু করে। কিন্তু সেসবের দিকে যেন কোন খেয়ালই নেই রবিনের , আজরার সমাধির পাশে সে ঠায় বসে রয়, একা।
Ground-Force is a power-metal band from Dhaka, Bangladesh. Planned in 2017, the band got gradually designed in 2019 and finally executed in early 2020.
The debut album is scheduled to be released on August 2021.
The metal’s band revelatory new record crosses genres and styles, effortlessly combining seemingly incompatible subgenres. Bandcamp Album of the Day Apr 26, 2024
Streamlining their post-metal sprawl through a sharper melodic focus, the Scottish juggernauts' third LP is labyrinthine yet approachable. Bandcamp New & Notable Apr 25, 2024